ইসলামে প্রতিটি কাজের জন্যই নির্দিষ্ট নিয়ম ও দোয়া রয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পথ নির্দেশ করে। সহবাস, যা বিবাহিত জীবনকে শান্তি ও সুখের পথে পরিচালিত করে, সেই ক্ষেত্রেও ইসলামিক নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলা শুধু শরিয়তের প্রতি আনুগত্য নয়, বরং এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আরও মজবুত ও বরকতময় করে তোলে। আজকের এই ব্লগে আমরা সহবাসের সময় পড়ার দোয়া এবং এর সাথে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।
সহবাসের দোয়া
সহবাসের সময় ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া পড়ার নির্দেশনা রয়েছে। এই দোয়া আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা এবং শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। হাদিসে উল্লেখিত দোয়াটি হলো:
**دُعَاءُ الجِمَاعِ:**
**بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا**
উচ্চারণ:
**বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা, ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাযাকতানা।**
অর্থ:
আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে যা রিজিক দিবেন, সেটাকেও শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করুন।
এই দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, যাতে এই সম্পর্ক থেকে জন্মগ্রহণকারী সন্তান শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে।
আরও পড়ুন: স্ত্রী সহবাসের দোয়া - কেন করবেন?
সহবাসের নিয়ম
ইসলামে সহবাসের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম রয়েছে, যা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আরও পবিত্র এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
১. পবিত্রতা বজায় রাখা
সহবাসের আগে এবং পরে পবিত্রতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু শরীরিক পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, বরং আত্মিক শুদ্ধতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সহবাসের পরে গোসল করা ফরজ, যা "গোসলে জানাবাত" নামে পরিচিত।
২. গোপনীয়তা রক্ষা করা
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত ব্যক্তিগত এবং গোপনীয়। এই সম্পর্কের বিষয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি সম্পর্কের পবিত্রতা নষ্ট করে এবং অপ্রয়োজনীয় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৩. সম্মতির গুরুত্ব
স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের সম্মতি থাকা অপরিহার্য। জোরপূর্বক কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া ইসলামের সুন্দর দীক্ষার পরিপন্থী।
৪. নির্দিষ্ট সময় ও পরিবেশ
সহবাসের জন্য এমন সময় এবং পরিবেশ নির্বাচন করা উচিত, যা উভয়ের জন্য আরামদায়ক হয়। তাড়াহুড়ো বা অস্বস্তিকর পরিবেশে এই সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত নয়।
৫. অশালীন কাজ পরিহার করা
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শালীনতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে অশালীন বা নিষিদ্ধ।
৬. দোয়া ও আল্লাহর উপর ভরসা
সহবাসের আগে এবং পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। এটি শুধু শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করে না, বরং এই সম্পর্ককে আরও বরকতময় করে তোলে।
সহবাসে স্বাস্থ্যগত দিক
ইসলামের নির্দেশনা শুধু আধ্যাত্মিক নয়, বরং স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, পবিত্রতা বজায় রাখার নির্দেশনা স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া, পারস্পরিক সম্মান ও সম্মতির উপর জোর দেওয়া মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
উপসংহার
সহবাস একটি স্বাভাবিক এবং পবিত্র সম্পর্ক, যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, স্নেহ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করে। ইসলাম এই সম্পর্ককে আরও অর্থবহ এবং বরকতময় করতে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। সহবাসের আগে দোয়া পড়া এবং ইসলামের নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলা শুধু একটি ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বরং এটি একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর বিবাহিত জীবনের ভিত্তি। আমাদের উচিত এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলা এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইসলামের শিক্ষা মেনে চলার তৌফিক দিন। আমিন।
Post a Comment